যুগসন্ধিক্ষণের কবি ও সাংবাদিক  শ্রীঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

  বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল বহুমুখী প্রতিভা কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯)একদিকে বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের সম্পাদক ও অন্যদিকে কবি-সাহিত্যিকএই সমণ্বয় শুধু সেকালে কেন একালেও বিরল। তিনি গুপ্তকবি নামেও সমধিক পরিচিত। 

ভ্রমণকারী বন্ধু ছদ্মনামেও সাহিত্যাঙ্গনে বিচরণ করেছেন তিনি।

 

ঈশ্বর গুপ্ত সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের মন্তব্যটি মূল্যবান : যাহা আছে, ঈশ্বর গুপ্ত তাহার কবি তিনি এই বাঙ্গালী সমাজের কবিতিনি কলিকাতা শহরের কবিতিনি বাঙ্গলার গ্রাম্য দেশের কবি সম্ভবতঃ সেইজন্য বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর প্রথম জীবনের কবিতাচর্চায় ঈশ্বর গুপ্তের অনুসরণ করেছিলেন তাঁর "বোধেন্দুবিকাশ" নাটকের গান স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যবহার করেছেন তাঁর "জীবন স্মৃতি" আত্মজীবনী গ্রন্থে।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সহ তাঁর পরবর্তী বহু সাহিত্যিক ঈশ্বর গুপ্তকে 'গুরু'পদে বরণ করেন

 মধ্যযুগের শেষ এবং আধুনিক যুগের সূচনাএই মধ্যবর্তী সময়টিকে বলা যেতে পারে বাংলা গদ্যের উদ্ভবকাল। গদ্য তখনও সাহিত্যের যথার্থ বাহনের উপযোগিতা অর্জন করেনি। এই সময়ের সামগ্রিক বাংলা সাহিত্যেই বিরাজমান ছিল যুগসন্ধির বৈশিষ্ট্য। ঈশ্বর গুপ্তের কবিপ্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল এই সময়েই। বাংলা সাহিত্যের যুগসন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে সব্যসাচীর মত দুহাতে দুদিকে নির্দেশ দিয়েছেন কবি ঈশ্বর গুপ্ত। এই সময়ের একমাত্র খ্যাতিমান কবি তিনি। তাঁর ভাষা, অলঙ্কার, ছন্দ কিছুটা মধ্যযুগীয় হলেও তার সঙ্গে মিশেছিল সমকালীনতাও। সমাজ ও জীবনকে ব্যঙ্গবিদ্রুপের দৃষ্টিতে দেখতে পছন্দ করতেন ঈশ্বর গুপ্ত।

 একই সাথে তিনি মধ্যযুগের বাংলায় সাহিত্য রচনা করেছেন এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ছাপ তাঁর কর্মে রেখে গেছেন । তাই দুই যুগের সন্ধিক্ষণের কবি হিসেবে ঈশ্চরচন্দ্র গুপ্তকে যুগসন্ধিক্ষণের কবি বলা হয়।

 তাঁর কাব্যপ্রতিভা যেমন বহুল আলোচিত, তেমনই সংবাদপত্র সম্পাদক হিসেবে তাঁর ভূমিকাও ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কারণ উনিশ শতকের যে সময়টিতে তাঁর কাগজ সংবাদ প্রভাকর আত্মপ্রকাশ করে, বাংলায় তখন এক অস্থির টালমাটাল সময়।

 সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নিজের মত প্রকাশ এবং মধ্যযুগীয় সাহিত্যের বেড়া টপকে আধুনিকতার পথে হেঁটে চলতি নিয়মনীতিকে শাণিত ব্যঙ্গের কষাঘাত করা দুক্ষেত্রেই চূড়ান্ত কৃতিত্বের দাবিদার ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।    

 মধ্যযুগীয় দেবত্মবাদ থেকে সাহিত্যকে বের করে এনে সাধারণের গুণে গুণান্বিত করে তুলেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। তাঁর রচনা বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন,

 ঈশ্বর গুপ্তের কাব্য চালের কাঁটায়, রান্নাঘরের ধূয়ায়, নাটুরে মাঝির ধ্বজির ঠেলায়, নীলের দাদনে, হোটেলের খানায়, পাঁঠার অস্থিস্থিত মজ্জায়। তিনি আনারসে মধুর রস ছাড়া কাব্যরস পান, তপসে মাছে মৎস্যভাব ছাড়া তপস্বীভাব দেখেন, পাঁঠার বোকা গন্ধ ছাড়া একটু দধীচির গায়ের গন্ধ পান।ইহা তাঁহার সাম্রাজ্য এবং ইহাতে তিনি বাংলা সাহিত্যে অদ্বিতীয়।আমার বিশ্বাস যে, তিনি যদি তাঁহার সমসাময়িক লেখক কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বা পরবর্তী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ন্যায় সুশিক্ষিত হইতেন, তাহা হইলে তাহার সময়েই বাঙ্গালা সাহিত্য অনেক দূর অগ্রসর হইত। বাঙ্গালার উন্নতি আরও ত্রিশ বৎসর অগ্রসর হইত।

 কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্ম মার্চ ১৮১২ খ্রীস্টাব্দে, উত্তর চব্বিশ পরগনার কাঞ্চনপল্লিতে, যার পরবর্তী নাম কাঁচরাপাড়া পিতা হরিনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন কবিরাজপাঁচ ভাইবোনের একজন ঈশ্বরের মাত্র দশ বছর বয়সে মা শ্রীমতী দেবী প্রয়াত হনবাবা দ্বিতীয়বার বিবাহ করলে সৎমায়ের সঙ্গে ঈশ্বরের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেতিনি কাঁচরাপাড়া থেকে কলকাতায় এসে জোড়াসাঁকোয় তাঁর মামারবাড়িতে আশ্রয় নেনসেখানে থেকেই অল্পস্বল্প লেখাপড়ার শুরুতবে দারিদ্র্য এবং প্রথাগত শিক্ষায় অনীহা এই দুই কারণেই খুব উচ্চশিক্ষার দিকে যাওয়া হয়নি ঈশ্বরেরযদিও পরবর্তীকালে নিজের চেষ্টায় বাংলা সংস্কৃত ভাষা আয়ত্ত করেন, বেদান্তদর্শন পড়েন।  ইংরেজি আর ফারসিও জানতেন

 ঈশ্বর গুপ্তের সাহিত্যকীর্তির সামগ্রিক অবদান স্মরণ করলে দেখা যায় তাঁকে নানা ভূমিকায়; যেমন

 () তাঁর অকৃত্রিম দেশানুরাগ বা স্বদেশপ্রীতির ভাব অনুজ লেখকদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিলতাঁর ভাবশিষ্য রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, দ্বারকানাথ অধিকারী, এমন কি বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যেও তার প্রকাশ দেখা গেছেতাঁকে বাঙালীর ইতিহাস অন্বেষণে উৎসাহিত করেছিল

() রঙ্গ-রসিকতা বা পরিহাসপ্রীতিঈশ্বর গুপ্তের কবিতায় হাস্যরসের প্রকাশ ঘটেছিল সমকালের সামাজিক বাস্তবতার পটভূমিতেসেই হাস্যরসের প্রকাশ হয়ত সব সময় নির্মল ছিল না

 () পত্রিকা সম্পাদনাপত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ববোধ বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বর গুপ্তের কাছ থেকে শিখেছিলেন১৮৩১ খ্রীস্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারী যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রেমচঁI তর্কবাগীশের প্রচেষ্টায় এবং কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সম্পাদনায় প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সংবাদ প্রভাকর' প্রকাশিত হয়এটি দেড় বছর পরে বন্ধ হয়ে যায়

পুনরায় ১৮৩৬ খ্রীস্টাব্দের ১০ আগস্ট নব কলেবরে প্রকাশিত হয়১৮৩৯ খ্রীস্টাব্দের ১৪ জুন এটি প্রথম বাংলা দৈনিক রূপে আত্মপ্রকাশ করে

(তথ্য-উৎস—‘কলিকাতা তারিখ অভিধান' দিব্যেন্দু সিংহ, ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৯, পৃষ্ঠা ২৪)

 () ঈশ্বর গুপ্ত বাংলা সাহিত্যে ঐতিহাসিকের ভূমিকা প্রাথমিকভাবে পালন করেছিলেনরামপ্রসাদ থেকে কবিওয়ালাদের পর্যন্ত জীবনী কবিতাসমূহ সংকলন করে সংবাদ প্রভাকরেধারাবাহিকভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেনতার মনে হয়েছিল, “কবির প্রণীত কবিত্বসকল গোপন থাকা কি দুঃখের বিষয়রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবু সম্পর্কে তার তথ্য নির্ভর রচনা একালের চিত্রপরিচালকদেরও চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রেরণা দিয়েছে

 এইভাবে ঈশ্বর গুপ্ত একদিকে, ভারতচন্দ্রের ভাষাশিল্পের অনুসরণ, কবিওয়ালাদের মতো শ্লেষ-যমকের চমক এবং রঙ্গব্যঙ্গের ঝলক দেখিয়ে তার কাব্যের বহিরঙ্গে প্রাচীন রীতি বজায় রেখেছেনঅন্যদিকে, বাংলা সাহিত্যে বাঙালী জীবনে জাতীয়তাবোধ বাস্তবতা সঞ্চার করে আধুনিকতার পরিচয় দিয়েছেনসেই কারণে তাঁকে নিঃসন্দেহে যুগসন্ধির কবিবলা যেতে পারে

 ঈশ্বরচন্দ্রের নবধারার লেখনীবলে মধ্যযুগীয় রচনার পাশাপাশি সমাজ কেন্দ্রিক বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক রচনা উজ্জ্বলরুপে বাংলা সাহিত্যে জায়গা করে নেয় তাঁর লেখনীতে একাধারে প্রাচীন নবীনের দ্বন্দ্ব প্রত্যক্ষ করা যায় অর্থাৎ মধ্যযুগীয় রচনাশৈলী আর আধুনিক যুগের বিষয়বস্তু নির্বাচন, আবার কখনো হাস্য-পরিহাস কটাক্ষবাণ নিক্ষেপ করে দেশ সমাজভাবনাকে বাংলা কবিতার আওতাভূক্ত করার ধরণ প্রকাশ পেয়েছে  

 মধ্যযুগের কবিদের রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল দেব-দেবীনির্ভর কিংবা নায়িকার রুপমাধুর্য বর্ণনাত্বকসেই গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে ঈশ্বরগুপ্তই প্রথম আমাদের চারপাশের বিষয়কে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে নব আঙ্গিকে বাংলা কবিতাকে রুপদান করলেনতাঁর কবিতার বিষয়বস্তু ছিল তপসে মাছ, আনারস সহ বিধবা বিবাহ, নীলকর, বাংলার মেয়েদের অতি আধুনিকতা, তৎকালীন ইয়ং বেঙ্গল সমাজ প্রভৃতিতিনিই প্রথম স্বদেশপ্রেমকে সুনিপুণ কায়দায় কবিতায় উপস্থাপন করেছেন; যা নিতান্তই নূতনগুপ্তকবি তাঁর সৃজনশীল লেখনীর মাধ্যমে খ্রিস্টানি রেওয়াজ অনুসরণকারীদের কটাক্ষ করেছেন, ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার প্রতি শরনিক্ষেপ করেছেন

 ঈশ্বর গুপ্তের  সাহিত্যকীর্তির মধ্যে স্বরচিত কাব্য ছাড়াও রয়েছে নব্য সাহিত্যিকদের উৎসাহ দান এবং পূর্ববর্তী সাহিত্যিক জীবনী বা রচনার উদ্ধার সাধন। তাঁর শখ ছিল প্রাচীন কবিদের জীবনী সংগ্রহ। ভারতচন্দ্র, রামনিধি গুপ্ত, হরু ঠাকুর প্রমুখের লুপ্তপ্রায় জীনবকথা তিনি উদ্ধার করেছিলেন।

 অনেকের ধারণা ঈশ্বর গুপ্ত প্রাচীনপন্থী, প্রতিক্রিয়াশীল, প্রগতি বিরোধী কবিওয়ালা শ্রেণীর কবি একথা সত্য নয়ঈশ্বর গুপ্তের মতো আধুনিক শিক্ষাদীক্ষা-বর্জিত ব্যক্তি যে কি রকম প্রশংসনীয়ভাবে আধুনিক জীবনের কল্যাণের দিকটি গ্রহণ করেছিলেন, তা ভাবলে অবাক হতে হয়ঈশ্বর গুপ্ত কল্যাণকর আধুনিকতার বিরোধী ছিলেন নাকলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনা হলে তিনি সেই প্রস্তাব সানন্দে সমর্থন করেন বাংলাদেশে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত এই মর্মে সংবাদ প্রভাকরেপ্রবন্ধ রচনা করেনতিনি স্ত্রী শিক্ষারও বিরোধী ছিলেন নাবরং পরিবারের মধ্যে স্ত্রীশিক্ষা প্রচারিত হলে বাঙালীর পারিবারিক সুখ সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে একথাও বলেছেনআমাদের দেশে পাশ্চাত্যের ন্যায় কারিগরী বিদ্যালয় না থাকাতেও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন

 ঈশ্বর গুপ্ত রাজনৈতিক ধর্মীয় ব্যাপারেও বিস্ময়কর উদারতা দেখিয়েছেনইংরেজ সরকারের কর ধার্য করার নীতির বিরুদ্ধে তিনি তীব্র সমালোচনা করেছেনরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে স্নেহ করতেনতিনিও মহর্ষির উদার ব্রহ্মতত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেনতিনিই কবিতায় সর্বপ্রথম বাঙালীকে স্বদেশপ্রেমে দীক্ষা দিয়েছেনদেশকে, ভাষাকে মাতৃরূপে বন্দনা করতে শিখিয়েছেনতাই তাঁকে প্রগতিবিরোধী না বলে, প্রগতিশীল বলেই শ্রদ্ধা করা উচিত

 কথিত আছে ঈশ্বর গুপ্ত প্রায় পঞ্চাশ হাজার ছত্র' কবিতা লিখেছিলেনঈশ্বর গুপ্তের বিপুল সংখ্যক কবিতাকে আমরা প্রকৃতি, ঈশ্বরতত্ত্ব, নীতিতত্ত্ব, স্বদেশপ্রেম, নারীপ্রেম সমসাময়িক ঘটনা মোট এই ছয়ভাগে বিভক্ত করতে পারি

তার নারীপ্রেম নীতি তত্ত্ব-বিষয়ক কবিতায় ভারতচন্দ্র কবিওয়ালাদের নিন্দনীয় প্রভাব সূচিত হয়েছেযদিও এতে ভারতচন্দ্রের তীক্ষ্ণ বাগ্ভঙ্গিমার উজ্জ্বলতা নেইতাঁর ঈশ্বরতত্ত্ব-বিষয়ক কবিতাগুলি ভক্তি নীতির বাঁধা পথেই রচিতঅবশ্য এতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের ব্রহ্মতত্ত্বের প্রভাবই লক্ষ্য করা যায়তবে যে কবিতাগুলিতে হতাশকবির আর্তবেদনা ধ্বনিত হয়েছে, তিনি পুরাতন সংস্কার ছেড়ে আপনার মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করেছেন, সেখানে আন্তরিকতা ফুটে উঠেছে

 এছাড়া প্রবোধ প্রভাকর বোধেন্দুবিকাশনাটকেও তার লেখা পদ আছেকবিতা সম্পর্কে তাঁর বোধের উন্মেষ ঘটেছে হয়ত এই অভিজ্ঞতা সূত্রেই

 পটুয়ার চিত্র ক্রমে রূপান্তর হয় 

কবি চিত্র কিবা চিত্র বিকাশের নয়

 তাঁর দেশপ্রেমের কবিতাগুলিতে (মাতৃভাষা’, ‘স্বদেশ’, ‘ভারত সন্তানের প্রতি’, ‘ভারতের অবস্থা' ইত্যাদি) সর্বপ্রথম পরাধীনতার গ্লানি ভবিষ্যৎ ভারতের গৌরবময় চিত্র অঙ্কিত হয়েছে

 কত রূপে স্নেহ করি দেশের কুকুর ধরি

বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া

 অবশ্য এই কবিতাগুলির জন্যই যে তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন, তা ঠিক নয়তিনি তদানীস্তন সমাজের পটভূমিকায় যে সমস্ত ব্যঙ্গবিদ্রূপমূলক কবিতা রচনা করেছিলেন, তার জন্যই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে আছেনমুখ্যত তিনি রঙ্গের কবিবঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায়, “ঈশ্বর গুপ্তের ব্যঙ্গে তৎকালীন সমাজের নানা অনাচার বিশৃঙ্খলাকে তিনি পরিহাসের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন এই রঙ্গব্যঙ্গে উতরোল কবিতাগুলিতেই তাঁর প্রতিভা যথার্থ বিকাশের পথ খুঁজে পেয়েছে

 বিলাতী মহিলা সম্বন্ধে উক্তি

 বিড়ালাক্ষী বিধুমুখী মুখে গন্ধ ছুটে,

আহা তায় রোজ রোজ কত রোজফুটে

 এই সমস্ত হাস্যপরিহাস-মিশ্রিত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ পরম উপভোগ্যজীবনের লঘু দিকটি তাঁর কোন কোন কবিতায় ('পাঁঠা', 'আনারস’, ‘তপসে মাছ’, ‘বড়দিনইত্যাদি) আশ্চর্য তীক্ষ্ণতা লাভ করেছেজীবনের প্রতি তাত্ত্বিক বা আদর্শনিষ্ঠ আকর্ষণ নয়, সহজ রসের প্রসন্নতা তার এই কবিতাগুলিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেতাঁর কোন কোন উক্তি (যেমন—“এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ, তবু রঙ্গে ভরা”; “শয্যায় ভার্যার প্রায় ছারপোকা উঠে গায়”, “বিবিজান চলে যান লবে-জান করে”) এখনও জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিতসূক্ষ্ম কারুকার্য, কল্পনা কুশলতা, আবেগ বা অন্য কোন মহৎ কবিত্বশক্তি না থাকলেও দৈনন্দিন জীবনের রঙ্গরসমুখর এরূপ চিত্ররূপ তার পূর্বে আর কারো মধ্যে দেখা যায় না

 

ঈশ্বর গুপ্তের গদ্যরচনার গুরুত্বও অপরিসীম, তাঁর গদ্য প্রথম গদ্য-লিখিয়েদের প্রভাবে প্রস্তুত নয়, তাঁর নিজেরই মতে; স্ববিহিত অলংকৃত সংস্কৃত রীতির আড়ম্বর এবং কথ্যগুণ দুইয়ের মিশ্রণ আছেসমালোচকদের মধ্যে অবশ্য এই গদ্যরীতির সম্পর্কে বিরূপতার ভাবই প্রকটযেমন রমেশচন্দ্র দত্তের মতে, "artificial and alternative and somewhat grotesque" তবু ঈশ্বর গুপ্তের গদ্যের প্রণিধানযোগ্য অংশ হল, আটপৌরে শব্দসম্ভার এবং বাঙালীর লৌকিক সংলাপ রীতিকে স্বীকৃতি দেওয়া


সর্বোপরি বলা যায়, ঈশ্বর গুপ্তের ব্যক্তিত্ব তথা তাঁর সারস্বত সাধনার মধ্যে দ্বিমানসিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়যেমন কবিতায় তিনি প্রথানুগত, সংরক্ষণশীল, নব্যশিক্ষা, সংস্কৃতি-আন্দোলন পাশ্চাত্য ভাবধারাগুলি তাঁর ব্যঙ্গের বিষয়, অথচ সেই নব্য বঙ্গীয়দের আয়ুধ স্বরূপ টম্ পেইন (Age of Reason) অংশতঃ অনুবাদ করে সংবাদ প্রভাকরেপ্রচার করেছিলেন (দ্রষ্টব্যঃ ভবতোষ দত্ত সম্পাদিত ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত রচিত কবিজীবনী)এই দ্বৈত মনোবৃত্তির কারণে সেকাল একাল দুয়ের উপরেই তাঁর সমতুল্য আকর্ষণ লক্ষিত হয়

 ঈশ্বর গুপ্ত ব্যঙ্গকবিতার জন্য অতুল খ্যাতি অর্জন করেছিলেনকবিয়ালদের জন্য সখীসংবাদলিখেও তিনি খ্যাতিমান হয়েছিলেন

 ইংরেজ আচার-আচরণকে অন্ধভাবে অনুকরণের প্রবণতাকে ব্যঙ্গ করে ইংরেজি নববর্ষকবিতায় লিখেছিলেন:

গোরার দঙ্গলে গিয়া কথা কহ হেসে
ঠেস মেরে বস গিয়া বিবিদের ঘেঁসে
রাঙ্গামুখ দেখে বাবা টেনে লও হ্যাম
ডোন্ট ক্যার হিন্দুয়ানী ড্যাম ড্যাম ড্যাম
পিঁড়ি পেতে ঝুরো লুসে মিছে ধরি নেম
মিসে নাহি মিস খায় কিসে হবে ফেম?
শাড়িপরা এলোচুল আমাদের মেম
বেলাক নেটিভ লেডি শেম্ শেম্ শেম্
ধন্যরে বোতলবাসি ধন্য লাল জল
ধন্য ধন্য বিলাতের সভ্যতার ফল

 ঈশ্বর গুপ্তের জীবৎকালে বিভিন্ন ধরনের রচনা প্রকাশিত হয়েছিল; যেমন() কবিবর রামপ্রসাদ সেনের 'কালীকীর্ত্তন' (১৮৩৩), () কবিবর ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের জীবনবৃত্তান্ত' (১৮৫৫), () 'প্রবোধ প্রভাকর' (১৮৫৮)তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় 'হিতপ্রভাকর' (১৮৬১), ‘বোধেন্দুবিকাশনাটক (১৮৬৩), ‘সত্যনারায়ণের পাঁচালী’, ‘ভ্রমণকারী বন্ধুর পত্র' (১৮৬৩) এবং বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদনায় ঈশ্বর গুপ্তের 'কবিতাবলী' (১৮৮৫) প্রকাশিত হয়কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন ঈশ্বর গ্রন্থাবলী (১৮৯৯) প্রকাশ করেন

  . শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় 'ঊনবিংশ শতাব্দীর গীতিকবিতা সংকলন' গ্রন্থে ঈশ্বর গুপ্তের কাব্যসমূহকে 'টি পর্যায়ে ভাগ করেছেন, যথা

 

  • () নৈতিক পারমার্থিক কবিতা,
  • () সমাজ প্রীতিমূলক কবিতা,
  • () প্রেম-রসাত্মক কবিতা,
  • () তুচ্ছ বিষয়বস্তু অবলম্বনে কবিতা,
  • () সমসাময়িক বিষয় ঘটনা অবলম্বনে রচিত কবিতা,
  • () বিবিধ প্রসঙ্গে ঈশ্বর গুপ্তের কবিতা

 

এছাড়াও দু-একটি উপবিভাগ হতে পারেএর দ্বারা অনুমান করা যায় গুপ্ত কবির রচনার প্রাচুর্যতবে এই বিপুল রচনাসমূহের মধ্যে খুব কম লেখাই শেষ পর্যন্ত পদ্যের তরলতা ছাড়িয়ে কবিতা হতে পেরেছে

 সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকায় লেখকগোষ্ঠী সৃষ্টির ঐতিহ্য বঙ্কিমচন্দ্র এবং তাঁর পরে অন্যান্য সম্পাদকেরাও ধারাবাহিক ভাবে অনুসরণ করেছিলেনফলে ঈশ্বর গুপ্তের অনুপ্রেরণাতেই এই পত্রিকা-কেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয়েছিল বলে মনে হয়ঈশ্বর গুপ্ত সংবাদ প্রভাকরবাদে পাষণ্ডপীড়ন' (১৮৪৬), 'সংবাদ রত্নাবলী' (১৮৩২), ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’ (১৮৪৭) ইত্যাদি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন

 কবিগান হাফ-আখড়াই-এর কবিরা কলকাতার অপরিমার্জিতরুচি শ্রোতাদের তৃপ্তির জন্য যে চটুল, শালীনতাহীন কাব্য রচনা করতেন তার পটভূমিতে দেখলে ঈশ্বর গুপ্তের কবিতায় বুদ্ধিদীপ্ত, বস্তুনিষ্ঠ মননভঙ্গি প্রকাশকে অবশ্য নিঃসন্দেহেই নতুন কাব্যরীতির ইঙ্গিতবহ বলে মনে হয়তিনি খণ্ড খণ্ড গীতিকবিতা রচনা করতেনএই কবিতা ছিল সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণএইসব কবিতায় বিষয় হিসাবে নীতিবাদ, সামাজিক রীতিনীতির সমালােচনা, খাদ্যবস্তুর বর্ণনা এবং সমসাময়িক বহু ঘটনা ব্যবহৃত হয়েছেবিষয় যাই (হাক, সর্বত্র তার বুদ্ধির (লাকে উজ্জ্বল ব্যঙ্গপ্রবণ মনের প্রকাশে কবিতাগুলি বৈশিষ্ট্যপূর্ণমহারানী ভিক্টোরিয়ার উদ্দেশ্যে রচিত কবিতাটি তার তীক্ষ্মব্যঙ্গের দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ(যাগ্য


"প্রাচীন রীতি পরিত্যাগ করে ঈশ্বর গুপ্ত যে খণ্ড কবিতা রচনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, পরবর্তীকালে রীতিটি অনুসৃত হলেও তিনি যে রঙ্গ ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিলেন, তা কিন্তু কার্যতঃ পরিত্যক্ত হয়েছিলকাজেই ঈশ্বর গুপ্ত যে নবধারার প্রবর্তন করেছিলেন, তিনি তার একক শিল্পী" (সমগ্র বাঙলা সাহিত্যের পরিচয়')


বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বর গুপ্তের এই বিশিষ্টতার প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছিলেন, "যে ভাষায় তিনি পদ্য লিখিয়াছেন এমন খাঁটি বাঙলায়, এমন বাঙালির প্রাণের ভাষায়, আর কেহ পদ্য কি গদ্য কিছুই লেখেন নাইতাহাতে সংস্কৃতিজনিত কোন বিকার নাই ইংরেজিনবিশীর বিকার নাইপাণ্ডিত্যের অভিমান নাই বিশুদ্ধির বড়াই নাইভাষা হেলে না, ঢলে না, বাঁকেনা সরল (সাজা পথে চলিয়া গিয়া পাঠকের প্রাণের ভিতরে প্রবেশ করেবঙ্কিমচন্দ্রের এই বিশ্লেষণ যথার্থ

কিন্তু তাঁর কবিতাগুলিতে সমাজবাস্তবতার প্রতি, প্রত্যক্ষ জীবনের প্রতি যে আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে তা একান্তভাবেই আধুনিক মানসিকতার লক্ষণএজন্য শেষ বিচারে তাকে একান্তভাবে প্রাচীন কাব্যধারার কবি বা একান্তভাবে আধুনিক কালের কবি কোনটিই বলা যায় নাতাঁকে যুগসন্ধিক্ষণের এক ক্রান্তিকালের সংশয়িত জীবনচেতনার ভাষ্যকার বলাই সঙ্গতআধুনিকতার লক্ষণগুলি তাঁর কাব্য প্রকাশিত হয়েছে বলেই ঈশ্বর গুপ্ত বড় কবি না হয়েও বাংলা কাব্যে নবযুগের প্রবর্তক

তাঁর কবি প্রতিভা কিছুটা সাংবাদিক ধরনের হলেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর চিরস্থায়ী আসনলাভ সম্ভব হয়েছে কারণ এক দিকে মধ্যযুগের দেবমাহাত্ম্য ব্যঞ্জক বিষয় থেকে বাংলা কবিতাকে মুক্ত করে তিনি যেমন অনায়াসে 'পাঁঠা', 'আনারস', 'তোপসে মাছ' ইত্যাদি বিষয় অবলম্বনে কবিতা লেখেন; তাঁর কবিতায় উঠে আসে সমসাময়িক রাজনৈতিক,সামাজিক ঘটনাবলির চিত্ররূপ তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারেতৎকালীন কবিওয়ালাদের জিম্মা থেকে বাংলা কবিতাকে তিনি নাগরিক বৈদগ্ধ মার্জিত রুচির আলোয় নিয়ে আসেনসাংবাদিক রূপেও ঊনবিংশ শতকের এই আধুনিক মানুষটি যথাযোগ্য কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন

শুধু কবি  বা সাংবাদিক হিসেবে নয় , ভারতবর্ষ তাঁর কাছে চিরঋণী সম্পূর্ণ অন্য কারণে -

ভারত-পাকিস্তান, এক আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বের সাক্ষী হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত  দ্বন্দ্বের তখন-এখন নেইওই শতকের পারেও যা, এই শতকের পারেও তাঈশ্বর গুপ্তের সাক্ষ্যের দ্বন্দ্বটি গত শতকের সত্তরের দশকেরপাকিস্তান অভিযোগ করেছিল, ‘ভারত ফারাক্কায় খাল কাটার ফলে পূর্ববঙ্গের পদ্মা-নদীতে জল নেইগুরুতর অভিযোগতো সেই সময়ের জনপ্রিয় গণমাধ্যম রেডিয়োয় খবরহয়েছিল১৯৭০ সালের ২৩শে এপ্রিল আকাশবাণীর রাত ১০টার সংবাদ পরিক্রমা উপস্থাপক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেনপাকিস্তানের অভিযোগ যে মিথ্যে তা প্রমাণে ভারত সরকার একটি ভ্রমণ কাহিনিকে নথি হিসেবে পেশ করলবইটির নাম, ‘ভ্রমণকারি বন্ধুর পত্র

লেখক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তবইয়ের অংশবিশেষ দেখিয়ে ভারত দাবি করল, পদ্মা আজ (১৯৭০) শুকিয়ে যায়নিঈশ্বর গুপ্ত ১২৬১ বঙ্গাব্দেই পদ্মা পারাপারের সময়ে নদীর দুরবস্থা দেখেছিলেন

মৃত্যুর শতাধিক বছর পরেও দেশকে সঙ্কট থেকে উদ্ধার করেছিলেন গুপ্ত কবিকী ভাবে তিনি সাক্ষী হলেন? তার একটা গল্প আছেএই সাক্ষ্যদানের মাত্র বছর সাতেক আগে তিনি নিজেই উজ্জ্বল উদ্ধার হয়েছিলেনঘুরতে ভালবাসতেন ঈশ্বরচন্দ্রদুর্গাপুজোর পরে জলপথে পাড়ি দিতেন বিভিন্ন জায়গায়সেই সব ভ্রমণকথা শুধু সফরনামা ছিল নাছিল ইতিহাস, প্রকৃতি আর জীবনচরিতের মিশেলযেখানে যেতেন, লোকজনের সঙ্গে ভাব জমাতেনউচ্চবিত্ত থেকে নদীর পারে ক্রীড়ারত শিশু, সকলেই ছিল তাঁর আগ্রহের বিষয়তখন তিনি বেশ নামীউচ্চবিত্তরা পরিচয় পেয়ে তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সমাদর করতেন আবার ছোট ছোট ছেলেদের কাছে ডেকে গানও শুনতেন১২৬১ সালে অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র পর্যন্ত গুপ্ত কবিউত্তর পূর্ববঙ্গ সফর করেছিলেন জলপথেইসেই ভ্রমণকথা প্রকাশিত হত সংবাদ প্রভাকরলেখাগুলি হয়তো হারিয়েই যেতকিন্তু অধ্যাপক মোহনলাল মিত্র লেখাগুলি উদ্ধার করে ১৯৬৩ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেনএই বই বছর সাতেক পরে ভারতের সঙ্কটমোচন করে

 পরিশেষে  তাঁর কবিতার মাধ্যমেই আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ  জানাই যুগসন্ধিক্ষণের এই মহান কবিকে -

কে বলে ঈশ্বর গুপ্ত , ব্যপ্ত চরাচর,

যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর

নির্ভীক সাংবাদিক ও কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮৫৯ সালের ২৩ জানুয়ারি (১২৬৫ বঙ্গাব্দের ১০ মাঘ) মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যঋণ: :

 

Ø  স্বর্গীয় শ্রী প্রতাপ গুপ্ত, কবি ঈশ্বর গুপ্তের প্রপ্রপৌত্র ও তাঁর সহধর্মিণী স্বর্গীয়া শ্রীমতী বনশ্রী গুপ্ত (পারিবারিক সূত্রে যাঁরা প্রতিবেদন  লেখিকা  স্বর্গত: পিতা ও মাতা)

 ঈশ্বর গুপ্তের জীবন চরিত কবিত্ব / বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভবতোষ দত্ত সম্পাদিত

Ø  সমগ্র বাংলা সাহিত্যের পরিচয়  : আদি মধ্যযুগ  -পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য

Ø  রামতনু লাহিড়ী তৎকালীন বঙ্গসমাজ -শিবনাথ শাস্ত্রী

Ø  ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত  - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায

 বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস -সুকুমার সেন

Ø  ঈশ্বরগুপ্ত : ছড়া ও ছবি -কমলকুমার মজুমদার

Ø  A History of Laughter: Ishwar Gupta and Early Modern Bengal - Milinda Banerjee

‘LLaughter and Subjectivity- Sudipta Kaviraj

Ø  ঈশ্বর গুপ্ত রচনাবলী, সম্পাদ শান্তিকুমার দাশগুপ্ত হরিবন্ধু মুখটী

Ø  ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, . অমৃতলাল বালা, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ (২০১০)

Ø  ঈশ্বর গুপ্ত : জীবন সাহিত্য, . পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রজ্ঞা বিকাশ (২০১৩)

Ø  আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১শে জানুয়ারি ২০২০ সাল

   

Comments

  1. প্রথমেই জানিয়ে রাখি,কল্যাণী নদীয়া র বাসিন্দা হিসেবে তাঁর ই নামাঙ্কিত সেতু পেরোতে হয় প্রায় ই। তাঁর আবক্ষ মূর্তির দিকে চোখ যায় স্বভাবতই, সহোদরা সমা বন্ধুনি এই পরিবারেই অন্যতম উজ্জ্বল

    ব্যক্তিত্ব এটা ভেবে গর্ব হয়,ভালো লাগা বৃদ্ধি পায়। তবে লেখা টা পড়ে সেই মহান ব্যক্তিত্ব কে যেন আরো কাছ থেকে জানলাম,জ্ঞাত হলাম তাঁর কর্ম কাণ্ডের। প্রনাম,প্রনাম

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দর লেখা যেমন তথ্যে সমৃদ্ধ তেমনই সুন্দর বাঁধনী।

    ReplyDelete
  3. লেখাটির সবচেয়ে জোরের দিক হল, সত্তরের দশকে আকাশবাণীর সংবাদ বিষয়ক অনুষ্ঠানে গুপ্তকবির রচনা থেকে উল্লেখ। ফারাক্কার জলবণ্টন ইস্যু এখনও অতি প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী সোমবার দিল্লি সফরে আসছেন। দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রসার ও রেল চলাচলে আরও অগ্রগতি ছাড়াও ধারণা করা অসমীচিন হবে না যে তিস্তা ও অন্যান্য নদীর জলবণ্টন প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসবে না। সেক্ষেত্রে ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের লেখা থেকে পদ্মার অবস্থা বর্ণনার বিশেষ তাৎপর্য এখনও রয়েছে। আজ গুপ্তকবির লেখা বা রচনা নিয়ে তেমন চর্চা চোখে পড়ে না। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তিতে আমাদের ফিরে দেখা দরকার, গুপ্তকবির লেখায় পরাধীন দেশে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার কিভাবে হয়েছিল।

    ReplyDelete

Post a Comment